ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বর্ষার শুরুতে ধসের আতঙ্ক

কক্সবাজারে পাহাড়ে বেড়েই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  কক্সবাজার পাহাড়ে স্থানীয়দের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। শহরের লাইট হাউজ এলাকা থেকে সোমবার তোলা -যুগান্তর
কক্সবাজার শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ে ঘর তৈরি করে বসবাস করছে প্রায় তিন লাখ মানুষ। প্রতিবছর এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বন উজাড় ও পাহাড় কেটে ঘর তৈরিসহ নানা কারণে ধসে গত ১০ বছরে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও বর্ষার শুরুতে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে পাহাড় ধসে রবিউল হোসেন নামে পাঁচ বছর বয়সি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত ৯টার দিকে কালারমারছড়ার অফিসপাড়ার পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রবিউল ওই এলাকার নজির হোসেনের ছেলে। বর্ষা শুরু হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই পাহাড় ধসের ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সূত্র জানায়, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে সারা বছর কোনো ব্যবস্থা নেয় না প্রশাসন। অথচ প্রতিবছর বর্ষা শুরু হলেই তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং চলে জোরেশোরে। এ ঘোষণাও মাইকিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় পাহাড় ধসে ঘটে মৃত্যুর ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন দায় এড়ানোর জন্য কোনোরকমে মাইকিং কিংবা জরুরি মিটিং করে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে। এদিকে গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে প্রাণহানি। এ আশঙ্কায় এ বছরও লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন। স্বেচ্ছায় না সরলে অভিযানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহর ও সদরসহ রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া এবং মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কেটে বসবাস করছে সহস্রাধিক পরিবার। এসব এলাকায় প্রায় পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করা হয়েছে। বর্ষা শুরু হলে উল্লিখিত এলাকায় টানা বৃষ্টিতে ক্ষতবিক্ষত পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে। এতে ঘটে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর ঘটনা।

মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ জানান, পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ কঠোর হস্তে দমন করা না গেলে প্রতিবছরই পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে। রোববার পাহাড় ধসের ঘটনায় এ নিহত শিশু রবিউল পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। এছাড়া পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ নাজমুল হক বলেন, জেলার সব পাহাড়ই কোনো না কোনোভাবে বেদখল অবস্থায় আছে। পাহাড় ধসের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে ভয়ঙ্কর পাহাড় কাটা। বৃষ্টির সময় পাহাড়ের লোকজনরা পাহাড় থেকে মাটি সরাতে ঢালু করে দেয়। ফলে পাহাড় ধস হয়। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ভেতরে ছয় ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঝুঁকিতে বাস করছে। তাদের সরিয়ে আনা একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তারপরও ঝুঁকি এড়াতে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। কী পরিমাণ মানুষ ঝুঁকিতে বাস করছে তার সঠিক তালিকা তৈরি করা যায়নি। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পর্যবেক্ষণ করে তালিকা তৈরি করতে দায়িত্ব পালন করছে মুক্তি কক্সবাজার, পালস্, ইপসাসহ কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু এড়াতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, পাহাড় ধস কমাতে হলে জনগণকে সচেতন হতে হবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড় কাটা বন্ধ করতে জনগণকে অনুরোধ জানিয়ে পাহাড়ে বেশি করে গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।

পাঠকের মতামত: